রৌমারীতে আবারও ২০ টি বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন

দেশজুড়ে
বেলাল হোসেন।স্টাফ রিপোর্টার।
০৮:২৫:২১এএম, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িঘর আবাদি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা হলহলিয়া নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা। গত দুই সপ্তাহে রৌমারী উপজেলার ১নং দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চর গয়টা পাড়া, কাউনিয়ারচর, তেলীর মোড়,আমবাড়ি,মুখতোলা,চর টাপুর চর  এবং ৬নং চর শৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা পূর্ব কাজাইকাটা গ্রামের প্রায় ২০ টি বাড়ি ও কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 

আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িঘর জমিজমা হারিয়ে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ গুলো আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে এবং কেওবা আবার কয়টা টিন দিয়ে ছায়লা তৈরি করে কোনো রকমে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। এছাড়াও হলহলিয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটছে এসব নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ গুলো। 

 হলহলিয়া নদীর  ভাঙ্গনের কবলে ঘরবাড়ি  হারিয়ে উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা গ্রামের মো. জহুরুল ইসলাম (৬৫) বলেন মোর(আমার) বাড়ি ঘর সোগি নদীর পেটোত  যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নাই। মানষের জায়গাত কয়টা টিন দিয়ে ছাপড়া তুলি কোনো রকমে আছি। কডাই (কোথায়) যায়া বাড়ি করমু জানিনা। 

একই কথা বলেন কাজাইকাটা তেলীরমোড় এলাকার মো.কছর আলী,(৫০) মো.জব্বার আলী ( ৬০) তারা বলেন আমাদের ভিটেমাটি সব হারিয়ে এখন পথের ভিখারী হয়ে গেছি ছেলে মেয়ে বউ বাঁচ্চা নিয়ে কোথায় যাব কি করব কিছুই জানিনা।

ওই এলাকার জরিনা খাতুন (৪৫) তিনি বলেন ছাওয়া,পোওয়া (বাচ্চা) নিয়ে মানষের বাড়িত থাকি আজও কোন মেম্বার চেয়ারম্যান খোঁজ খবর নিলোনা যে আমরা বাঁচি আছি না মরি গেছি। 

দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চর গয়টা পাড়া গ্রামের মো. রফিক মিয়া (৪০) বলেন কয়েক  
বছর আগে ঘর বাড়ি সব নদীতে কেড়ে নিয়েছিলো, সেখান থেকে এসে এই গ্রামে একটু জায়গা কিনে কোন মতে বাড়ি করে ছিলাম এটুকই ছিলো আমাদের শেষ সম্বল,শেষ সম্বল টুকুও কেড়ে নিলো সর্বনাশা হলহলিয়া নদী ভিটে মাটি সব নদীতে হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে কোন মতে দিন কাটাচ্ছি কোথায় বাড়ি করবো জানিনা। 

চরগয়টা পাড়া গ্রামের আবজাল হোসেন, আবু বক্কর সিদ্দিক, আকবর,নয়াবআলী,সফিক মিয়া, আলী,আরশাফ আলী বলেন, কয়েকদিন থেকে নদী খুব ভাঙছে। গাছপালা ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমাদের বাড়িও  খুবি হুমকির মুখে কখন জানি ভেঙ্গে যায়। 
আমরা ত্রাণ বা সাহায্য চাইনা আমরা চাই চুলকানির মুখটা টেকসই একটা বাঁধ।

রৌমারী উপজেলা বাসির একটাই দাবি চুলকানির মুখ টেকসই বাঁধ নির্মাণ করে বন্ধ করে দিতে হবে। তারা বলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের হলহলিয়া নদীর দিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। 

নদী ভাঙ্গনের বিলিন হয়ে গেছে শত,শত গাছ পালা,বাঁশঝার,বিদ্যুৎতের খুঁটি আখের খেত,অন্য, অন্য বিভিন্ন আবাদি জমি। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, আবু সাঈদ, মমিনুল ইসলাম মমিন বলেন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়  তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে শুধু তাই নয় এখন পানি কমতে শুরু করেছে তবুও ভাঙ্গছে নদীর পার। গত ২ সপ্তাহে দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬-৭ জনের অবস্থা একেবারেই খুব খারাপ। তাদের যাওয়ার মতো কোনো স্থান নেই।

দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম (রেজা) বলেন,গত দুই সপ্তাহে আমার ইউনিয়নে অনেক কয়েকটি  পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে এবং অনেক কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গন চলমান, ভাঙ্গন রোধে  আমরা আপাতত কিছু জিওব্যাগ সেখানে ফেলেছি।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত মোছাঃ মাহমুদা আক্তার সৃতি বলেন নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি অনেক কয়েকটি বাড়িঘর ও আবাদি জমি  নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এই নদী ভাঙ্গন রোধ করতে হলে চুলকানির খালের মুখ টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে তবেই এই নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব। 

এবিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা 
মো.পূবন আখতার বলেন,নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দেখেছি অনেক কয়েকটি বাড়িঘর ও আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলিয়ন হয়ে গেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।