বন্ধ হচ্ছে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বেতার সম্প্রচার

বন্ধ হতে যাচ্ছে জনপ্রিয় ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা রেডিও। গত ৬৩ বছর ধরে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় খবর দিয়ে আসছিল রেডিওটি।
পিটিআই জানিয়েছে, আগামী ১৭ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেডিওটি বন্ধ হবে।
ভয়েস অব আমেরিকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভোয়া’র বাংলায় এফএম এবং শর্টওয়েভ রেডিও সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা ১৭ জুলাই শেষ হবে। বেতারে শ্রোতাগোষ্ঠীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শক-অনুসারীর সংখ্যা বাড়ায় বাংলা এফএম ও শর্টওয়েভে বেতার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তারা টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা দর্শক-শ্রোতাগোষ্ঠীর জন্য নতুন অনুষ্ঠান ও আধেয় প্রচার বাড়াবে।
ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান জন লিপম্যান বলেন, ১৯৫৮ সালে ভয়েস অব আমেরিকার যখন যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখন বাংলাদেশ ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে পরিচিত ছিল। তখন মার্শাল ল জারি ছিল এই এলাকায়। সেই সময় এ অঞ্চলে কোনো বেসরকারি রেডিও কিংবা টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। তখন সীমান্তের ওপার থেকে ভয়েস অব আমেরিকার রেডিওতে বাংলায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো। স্বাধীনতার খবর এবং তথ্য জানার জন্য এটা ছিল অন্যতম মাধ্যম।
ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শতরূপা বড়ুয়া বলেন, যে সময় বেতারই ছিল সংবাদ পাওয়ার মুখ্য উৎস, সে সময় থেকেই ভিওএ বাংলা রেডিও সম্প্রচার বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা তার শ্রোতামণ্ডলীর কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আমাদের বেড়ে ওঠার সময় একটি বড় অংশজুড়ে ছিল এই বেতার সম্প্রচার, ঘরে ঘরে সুপরিচিত ছিল ভিওএ। এই পরিচিতির ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখনকার দিনে শর্টওয়েভ ও মিডিয়াম ওয়েভ রেডিওর তুলনায় যেসব মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতা বেশি সক্রিয়, সেখানে উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে তুলব আমরা।
বাংলা অনুষ্ঠান বন্ধের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শর্টওয়েভে শ্রোতার সংখ্যা ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু তাদের বাংলা সার্ভিসের ফেসবুক পেজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। ঠিক একই সময়ের ব্যবধানে ইনস্টাগ্রামে ভিডিও দেখার পরিমাণ বেড়েছে ২৭৪ শতাংশ।
লিপম্যান বলছেন, ‘বাংলা ভাষার মানুষের জন্য এখন অনেক টেলিভিশন এবং রেডিও আছে। বাংলাদেশে অনলাইন খবরের চাহিদা বাড়ছে। ভিওএ বাংলার দর্শকেরা যেখানে বেশি সক্রিয়, সেদিকেই আমরা নজর দিচ্ছি।’
কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার এই দিনগুলোতে স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে ভিওএ বাংলা। ১৯৫৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে কীভাবে পরিবর্তন এসেছে সেসব তুলে ধরা হবে।