রমজানে দাঁত ও মুখের সুস্থতা

লাইফ স্টাইল
ডাঃ তনুশ্রী তরফদার।
০৪:২০:৫৩পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২১
ফাইল ছবি।

পবিত্র রমজান মাস আসন্ন। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সিয়াম সাধনা করে থাকেন। সুষ্ঠুভাবে রোজা আদায়ের জন্য সুস্থতা অপরিহার্য। 

মুখগহবর হচ্ছে আমাদের শরীরের প্রবেশদ্বার। তাই এ সময় মুখ ও দাঁতের যত্ন নেয়া আবশ্যক।

# সেহরির পরে সঠিক নিয়মে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। অতঃপর দাঁতগুলোর মাঝে আটকে থাকা খাদ্যকণা ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় তা থেকে জীবাণুর সংক্রমণ এবং দন্তক্ষয়, মাড়ির প্রদাহের মত নানাবিধ রোগ হতে পারে।

# যদি সেহরির পর সময় না থাকার কারণে দাঁত ব্রাশকরা সম্ভব না হয় তাহলে পরবর্তীতে টুথব্রাশ শুধুমাত্র পানিতে ভিজিয়ে ব্রাশ করতে হবে কিংবা নিমের ডাল বা জয়তুনের ডাল দিয়ে মিসওয়াক করতে হবে।

রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করা অনুচিত কেননা এর স্বাদ গৃহীত হয় বলে রোজা মাকরূহ এমনকি রোজা ভেঙেও যেতে পারে যদি অসাবধানতাবশত পেস্ট গলাধঃকরণ হয়ে যায়।

# খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলকুচি করতে হবে এবং জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে।

# রোজারত অবস্থায় দীর্ঘসময় মুখ শুষ্ক থাকে এবং দুর্গন্ধ তৈরি হয়। শুষ্ক মুখে দন্তক্ষয় সহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য সেহরির পরে ভালোভাবে দাঁত ব্রাশের পর জীবাণুনাশক মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উত্তম। এছাড়াও সেহরি ও ইফতারের পর বেশি করে পানি পান করা উচিত।

# ইফতারের পর ভালোভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে এবং ইফতারে ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা এতে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা ঢেকুড়ের সংগে মুখে এসে দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। # অনেকে মনে করেন যে রোজারত অবস্থায় দাঁতের চিকিৎসা করা যাবে না। কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। রোজারত অবস্থায় ফিলিং, রুট ক্যানেল চিকিৎসা, দাঁত তোলা, স্কেলিং, লোকাল এনেস্থেসিয়া ও মুখের ঘা চিকিৎসায় ব্যবহৃত মলম নেয়া যেতে পারে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো চিকিৎসা চলাকালীন রক্ত, পানি বা ঔষধ যেনো গলাধঃকরণ না হয়ে যায়*।

# দাঁতে কিংবা মুখে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে বিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ বিডিএস চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। এ সময় সাধারণত দাঁতের ব্যথা এবং মাড়ি দিয়ে রক্ত বা পূজপড়া জনিত সমস্যা নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে আসে। অনেকগুলো কারণে দাঁতে ব্যথা দেখা দিতে পারে। মুলত দুই কারণে হতে পারে। এক. মাড়ি ব্যথার কারণে দুই. ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে। আর এই ব্যাকটেরিয়ার খালি চোখে দেখা যায় না। তাই কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই সর্তক থাকতে হবে, মুখের যত্ন নিতে হবে।

সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই মুখ ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে। অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা খাবার দাঁতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বেশি বেশি শাক-সবজি এবং ভিটামিন সি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি মুখের দুর্গন্ধকে বাড়িয়ে দেয়। দাঁত পরিষ্কারে নরম, নমনীয়, ছোট টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। বড় বা শক্ত টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশি ফল খেতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানি পানের মাধ্যমে মুখের আদ্রর্তা রক্ষা পায়। ফলে অনেক রোগ প্রতিরোধ হয় ও মুখের দুর্গন্ধ কমে যায়। অন্য চায়ের পরিবর্তে গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে।

রমজানে মুখের প্রধান সমস্যা হলো মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসা। মূলত মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য দায়ী জমে থাকা খাদ্যকণা ও মুখের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সালফাইড ও অ্যামোনিয়া তৈরি হওয়া। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অজু করার আগে নিয়মিত মেসওয়াক করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, পানি ও টুথপেস্ট যেন গলার ভেতর প্রবেশ না করে। একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সুস্বাস্থ্য একান্ত কাম্য।